Playlist 1981 Phil Collins - In The Air Tonight 1981 Foreigner - Waiting for a Girl Like You 1983 The Police - Every Breath You Take 1985 Robert Tepper - No Easy Way Out 1986 Kenny Loggins - Danger Zone 1987 Starship - Nothing Gonna Stop Us Now 1988 Belinda Carlisle - Heaven Is A Place On Earth 1987 U2 - With or Without You 1989 Phil Collins - Another Day In Paradise 1989 Elton Jhon - Sacrifices 1998 Modern Talking - You're My Heart, You're My Soul 2014 The Midnight - Gloria 2014 The Midnight - Los Angeles 2016 The Midnight - The Comeback Kid 2016 The Midnight - Sunset 2016 FM-84 - Running In The Night (feat. Ollie Wride) 2018 Thought Beings - Hazy 2018 The Midnight - Lost Boy 2018 Alex & Megan McDuffee - Avenger 2019 Fury Weekend - Thousand Lights (feat. Megan McDuffee) 2019 Ollie Wride - Back To Life 2014 The Midnight - Days of Thunder 2019 Kalax - Dream 2020 Nina - Automatic Call 1983 Tangerine Dream - Love on a Real Train (OST Risky Business)
হুমায়ূন আহমেদ - এলেবেলে দ্বিতীয় পর্ব
(Ele Bele 2 by Humayun Ahmed)
ভিক্ষুকের
ঘোড়ার গল্পটা আপনাদের জানা আছে কি না বুঝতে পারছি না। যে বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি তার
জন্যে ভিক্ষুকের ঘোড়ার গল্প জানা থাকলে ভাল হয়। গল্পটা এই রকম -
এক গ্রামে
এক ভিক্ষুক ছিল। বেচারা খোঁড়া। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করতে পারে না – বড় কষ্ট।
কাজেই সে টাকা-পয়সা জমিয়ে একটা ঘোড়া কিনে ফেলল। এখন ভিক্ষা করার খুব সুবিধা। ঘোড়ায়
চড়ে বাড়ি বাড়ি যায়।।
এক জোছনা
রাতে গ্রামের কিছু ছেলেপুলে ঠিক করল - একটা ঘোড়া দৌড়ের ব্যবস্থা করবে। পাঁচটা ঘোড়া
জোগাড় হল। ডিসট্রিক্ট বোর্ডের ফাঁকা রাস্তায় ঘোড়া ছুটল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চারটা
ঘোড়া জায়গামত এসে পৌঁছল, পঞ্চম ঘোড়ার কোন খোঁজ নেই। একেবারে লাপাত্তা। সবাই চিন্তিত
হয়ে অপেক্ষা করছে। ঘন্টা দুই পর পঞ্চম ঘােড়ার দেখা পাওয়া গেল, হেলতে দুলতে আসছে।
বন্ধুরা চেঁচিয়ে উঠল, কিরে কোথায় ছিলি তুই?
ঘোড়ার
উপর থেকে ক্লান্ত ও বিরক্ত গলা ভেসে এল - আর বলিস না, আমার ভাগে পড়েছে ঐ হারামজাদা
ভিক্ষুকের ঘোড়া। এই ঘোড়া রাস্তায় ওঠে না - মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাড়িয়ে থাকে।
গ্রামের যে ক'টা বাড়ি আছে সব কটার সামনে দাড়িয়ে তারপর আসলাম।
এই হচ্ছে
ভিক্ষুকের ঘোড়ার গল্প। এইবার যে বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি সেটা বলি।
গতবারের
ভয়াবহ বন্যায় এদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঠিক করলেন তাঁরা কিছু করবেন। সমস্যা
হতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বলছি না। বুদ্ধিমান পাঠক, অনুমানে বুঝে নিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাজকর্মের ধারা অন্যদের
মত হবে এটা আশা করা যায় না। কি করা হবে তা ঠিক করার জন্যে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয়
কমিটি গঠন করা হল। কমিটিকে বলা হল 'ওয়ার্কিং পেপারস' তৈরি করতে। সেই কমিটি আবার তিনটি
সাব-কমিটি করল। সেই সাব-কমিটিগুলোর আহবায়ক কে হবেন তা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হল। জটিলতা
কমাবার জন্য আরো একটি উপকমিটি তৈরী হল। পাঁচ ছ'টি মিটিংয়ের পর কেন্দ্রীয় কমিটি পরিকল্পনা
দাখিল করল - বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেরাই একটি ত্রাণকেন্দ্র খুলবেন এবং পরিচালনা
করবেন।
সেই ত্রাণকেন্দ্র
অন্যসব ত্রাণকেন্দ্রের মত হবে না। নুতন ধরনের হবে। যারা এই ত্রাণ কেন্দ্রে আশ্রয় নেবে
তাদের অক্ষরজ্ঞানের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। ত্রাণকেন্দ্র ছেড়ে এরা যখন বাড়ি ফিরবে
তখন তারা লিখতে এবং পড়তে জানবে। ত্রাণশিবিরে তাদের রাখা হবে মোট ২৫ দিন। প্রতিদিন
তাদের দুটি করে অক্ষর শেখালেই হবে।
জ্ঞানের
সঙ্গে সঙ্গে তাদের খাদ্যও দেয়া হবে। ত্রাণ ব্যবস্থায় প্রচলিত খিচুড়ি নয়। বিশ্ববিদ্যালয়
ফুড এণ্ড নিউট্রিশন বিভাগের তত্ত্বাবধানে একই খরচে তৈরী খিচুড়ি যাতে শরীরের নিউট্রিশনাল
ব্যালান্স ঠিক থাকে। ফুড এণ্ড নিউট্রিশন বিভাগের সভাপতির ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে খিচুরির
নমুনাও তৈরী হল। জিনিসটির রং হল গাঢ় সবুজ। কেন হল সেটা একটা রহস্য, কারণ কাঁচা মরিচ
ছাড়া সেখানে সবুজ অন্য কিছু ছিল না। সভাপতিসহ সবাই সেই খিচুড়ি এক চামচ করে খেলেন
– স্বাদ ভালই, তবে এক চামচেই প্রত্যেকের পেট নেমে গেল। কেউ তা স্বীকার করলেন না, কারণ
নোংরা অসুখ নিয়ে কথা বলতে শিক্ষকরা পছন্দ করেন না।
খাওয়া-দাওয়ার
থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বেশী জোর দেয়া হল। প্রতি পঞ্চাশজন পুরুষের জন্যে
একটি করে এবং প্রতি চল্লিশজন মহিলার জন্যে একটি করে বাথরুমের ব্যবস্থা করা হল। মহিলারা
সুযােগ বেশী পেলেন, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সােসিওলজী বিভাগের একজন শিক্ষক সমীক্ষায়
দেখিয়েছিলেন – মহিলারা বাথরুম বেশী ব্যবহার করেন।
পুরুষদের
বাথরুমে দাড়িওয়ালা একজন পুরুষের ছবি, নীচে লেখা পুং, মেয়েদের বাথরুমে ঘোমটা পরা
নব বধু, নীচে লেখা মহিলা। এই নিয়ে বাথরুম সাব কমিটিতে জটিলতা সৃষ্টি হল। বলা হল –
দাড়িওয়ালা পুরুষের ছবি কেন? পুরুষমাত্রেই যে দাড়ি থাকবে তার তো কোন কথা নেই? সাইকোলজির
একজন এসোসিয়েট প্রফেসর বললেন, “দাড়িওয়ালা পুরুষের ছবি বন্যার্তদের কনফিউজ করতে পারে।
তারা ভাবতে পারে যাদের দাড়ি আছে শুধু তারাই এইসব বাথরুমে যাবে। এরা এমনিতেই একটা মানসিক
চাপের ভেতর আছে। নতুন কোন চাপ সৃষ্টি করা উচিত হবে না।” দাড়ি সমস্যার সমাধান হল না।
বিষয়টা চলে গেল কেন্দ্রীয় কমিটিতে। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণশিবির উদ্বোধন
বন্ধ রাখা হল।
অবশ্যি বন্ধ রাখার আরও কারণ আছে। উদ্বোধন কে করবেন তা
নিয়েও সমস্যা। | অনেকে চান ভাইস চ্যান্সেলর করবেন, আবার অনেকে ভাইস চ্যান্সেলরের নামও
শুনতে চান না। তাদের চয়েস প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর।
ইতিমধ্যে
অনেক দেরী হয়ে গেছে। বন্যার্তর অন্যসব ত্রাণশিবিরে ঢুকে পড়েছে। তবে যেহেতু বাংলাদেশের
কোন ত্রাণশিবির কখনো খালি থাকে না, এটিও খালি রইল না। শহরের যত রিকশাওয়ালা তাদের ছেলেমেয়ে
এবং স্ত্রীর হাত ধরে ব্রণ কেন্দ্রে ঢুকে পড়ল। দিনে রিকশা চালায়। রাতে এসে সাহায্য
হিসেবে পাওয়া কম্বলের উপর ঘুমিয়ে থাকে। ব্যবস্থা অতি চমৎকার। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
ডাক্তার আছে, নার্স আছে, সুন্দর বাথরুম। সবুজ রঙের খাদ্যটা একটু সমস্যা করছে, তবে সব
তো আর পাওয়া যায় না। |
তৃতীয়
দিন থেকে ক্লাস শুরু হল। চল্লিশজন করে একটা ক্লাসে। সকাল নটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত
ক্লাস। বিকেল আড়াইটা থেকে টিউটোরিয়েল। প্রতি গ্রুপে সাতজন করে। পড়ানোর কায়দাও নতুন
ধরনের। ব্যঞ্জনবর্ণ দিয়ে শুরু। স্বরবর্ণগুলো ব্যঞ্জনবর্ণের সাথেই আসছে। যেমন প্রথম
দিনে শেখানো হল ‘ক’ এবং ‘কা। সকাল ন'টা থেকে দুপুর বারটা পর্যন্ত সবাই এক নাগাড়ে পড়ছে
‘ক’, ‘ক’, ‘কা’, ‘কা। দ্বিতীয় দিনে ‘কি’, ‘কি’, ‘ক’, ‘কু’।
বন্যার্তরা
ব্যাপারটায় মনে হল বেশ মজা পেল। যখন ক্লাস হচ্ছে না, রাতে ঘুমুবার আয়োজন হচ্ছে তখনো
দেখা গেল এরা নিজেদের মধ্যে নতুন ভাষায় কথা বলছে।
যেমন-
‘কা কা কি কি কু?’
‘গা গা গু গু’।
‘গি গি গি?’
‘খ খ খা’।
দশম দিন
শিক্ষকদের উৎসাহে ভাটা পড়ে গেল। কারণ তাঁরা লক্ষ্য করলেন। ছাত্ররা শুরুতে কি পড়েছে
সব ভুলে বসে আছে। যখন তারা চ চ চা চা পড়ে তখন ক ক কা কা ভুলে যায়। আবার যখন ত ত ত
তা পড়ে তখন চ চ চা চা ভুলে যায়।
এই স্মৃতিশক্তি
বিষয়ক সমস্যার কি করা যায় তা বের করবার জন্যে। মনোবিদ্যা বিভাগের সভাপতিকে আহবায়ক
করে একটি জরুরী কমিটি গঠন করা হল এবং কমিটিকে অনতিবিলম্বে সুপারিশমালা পেশ করতে বলা
হল।
সুপারিশমালা
হাতে আসার আগেই অবশ্যি ত্রাণশিবির খালি হয়ে গেল। কারণ এখানে সাহায্য কিছুই পাওয়া
যাচ্ছে না। শিক্ষকরা নিজেরা যা পারছেন দিচ্ছেন, বাইরের সাহায্য নিচ্ছেন না। কার দায়
পড়েছে বিনা সাহায্যে কা কা কু কু করতে?
অবশ্যি
পঁচাত্তর বছর বয়সের মুনশিগঞ্জের ছমির উদ্দিন মোল্লা একা ঝুলে রইলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে
পড়াশুনার একটা সুযোগ তিনি পেয়েছেন এই সুযোগ হারাতে রাজি নন। একটা ডিগ্রী না নিয়ে
তিনি যাবেন না।
এইসব
দেখে আমার ধারণা হয়েছে ভিক্ষুকদের ঘোড়ার মত আমাদের শিক্ষকদেরও একটা ঘোড়া আছে। সেই
ঘোড়াও বিশেষ বিশেষ জায়গা ছাড়া যেতে পারে না।

Comments
Post a Comment